1. smsitservice007gmail.com : admin :
তানোরে চিকিৎসার নামে প্রতারণা - সতেজ বার্তা ২৪
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

তানোরে চিকিৎসার নামে প্রতারণা

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪
  • ১৬১ বার পঠিত

রাজশাহীর তানোরে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, তানোর উপজেলা সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন, গোল্লাপাড়া বাজার, মুন্ডুমালা ও চৌবাড়িয়া এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে চটকদার নামের ভুঁইফোড় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে উঠা এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মাঝে মধ্যেই ভুল চিকিৎসা রোগী মারা যাবার ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক  সেন্টারে নেই নিজস্ব কোনো চিকিৎসক। অথচ প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একাধিক চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দক্ষ টেকনিশিয়ানদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্যাথলজির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রতিবেদন দেন সেখানকার কর্মচারীরা। এমনকি মালিক ও কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১১টি। এরমধ্যে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার  ৫টি এবং শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার  রয়েছে ৬টি। তবে, ওই তালিকার বাইরে আরও একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। অথচ সরকারি নিয়মানুসারে ১০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্য সার্বক্ষণিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন প্রশিক্ষিত সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে। আর ডায়াবেটিস  বিভাগের জন্য স্ব-স্ব সেক্টরে সরকার অনুমোদিত ও প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে উপজেলা হাসপাতালের সামনে ‘প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ গড়ে তোলা হয়। যার রেজিঃ নম্বর- ৪৯০২ দেখানো হয়েছে। তবে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার শুধু রাজশাহী নগরীর মধ্যে সিমাবদ্ধ। কিন্ত্ত নগরীর বাইরে তানোর উপজেলা হাসপাতালের গেটের সামনে দেদারসে চলছে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। সেখানে দক্ষ টেকনিশিয়ানদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্যাথলজির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন দেন সেখানকার মালিক ও কর্মচারীরা বলে স্থানীয়রা জানান।
সম্প্রতি তানোর পৌর সদরের গোল্লাপাড়া বাজারে ‘তানোর জেনারেল হাসপাতাল’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তবে, এই হাসপাতালের সাইনবোর্ডের নিচে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল বলা হলেও নিবন্ধন নম্বর দেয়া হয়নি।
অপরদিকে, উপজেলার সরনজাই বাজারে গড়ে তোলা হয় গ্রীন কেয়ার নামে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতে রাব্বিল ইসলাম নামের একজনকে  ৬ মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা হয়। কিন্ত্ত জামিনে বেরিয়ে রাব্বিল ইসলাম একই প্রতারণা শুরু করেছে মহানগর ক্লিনিক ও গ্রীন কেয়ার নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও মুন্ডুমালা পৌর সদরে রয়েছে পদ্মা এবং আসনারা নামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মুন্ডুমালা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানেও নেই কোন দক্ষ টেকনিশিয়ান। এসব ক্লিনিক, ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ডিএমএফ ডাক্তার দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে এসব ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারগুলো চলছে। যে কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নেই কোনো নজরদারি। তারা সব সময় প্রভাবিত হন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক ও ম্যানেজার দ্বারা। ফলে ক্লিনিক প্যাথলজি সেন্টার মালিকেরা স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। অনিয়ম ও অপচিকিৎসার কারণে মাঝেমধ্যে ঘটছে রোগী মৃত্যুর ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তাৎক্ষণিক সেবা নিতে এসে রোগীরা বেশির ভাগ ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তারা ভালো মানের চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেন। এমনকি রোগীদের সিজারিয়ানসহ নানা ধরনের অপারেশন করছেন। আর প্রশিক্ষিত সেবিকার কাজ করানো হয় আয়া ও পিয়ন দিয়ে।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী  বলেন, মুন্ডুমালা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা -নিরীক্ষার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে কর্মচারী দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে এতে অন্য কোনো প্যাথলজিস্টদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেন। এ বিষয়ে উপজেলা উপজেলা হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল আসছে না।
উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, তানোরে কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিজস্ব চিকিৎসক নেই। দু”একটা ক্লিনিকে ভাড়া করা চিকিৎসক দিয়ে শুধু অস্ত্রোপচার করিয়ে নেন। বাকি কাজ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা করেন। অথচ ক্লিনিকের সামনে একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা আছে। যার বেশির ভাগ ভুয়া চিকিৎসক। অথবা যার নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করছে, হয়তো ওই চিকিৎসকেরা জানেন না। আবার অনেক ক্লিনিক মালিক নিজেরাই চিকিৎসক সেজে অস্ত্রোপচার করছেন। এতে রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। এর ফলে মাঝেমধ্যে রোগী সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসাসেবার অভাবে মারাও যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ক্লিনিক মালিক বলেন, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারে যেন কোনো হয়রানি বা আইনি জটিলতা না হয় এজন্য সব মালিক মিলে প্রশাসন ম্যানেজ করা হয়। যেকোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধান করা যায়।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. বার্নাবাস হাসদাক বলেন, পুরো উপজেলায় ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক রয়েছে। এরমধ্যে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ৫টি। আর শুধু ডায়াগনস্টিক রয়েছে ৬টি। তবে ‘তানোর জেনারেল হাসপাতাল’ নামক প্রতিষ্ঠান ব্যাপারে তিনি অবগত নন। এরপরও কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপচিকিৎসা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তানোরে অনেক ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকিগুলোতে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। আর কোনো অবৈধ ক্লিনিক বা প্যাথলজি সেন্টার আছে কি না, সেটা কাগজপত্র না দেখে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
এ জাতীয় আরও খবর
Translate »