তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী পাকড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।এদিন সকাল থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন বিক্ষুব্ধ মানুষের আনাগোনায় পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠে। পুলিশ মোতায়েন করে পরীক্ষা নেয়া হয়। ওদিকে শিক্ষক-কর্মচারীর চাঁদার টাকায় ডিজির প্রতিনিধি ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে রাজকীয় ভুরি করানো হয়, যেটা নীতিমালা পরিপন্থী।এছাড়াও তানোর-গোদাগাড়ীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রমে চেনা মুখের একই ব্যক্তি ডিজির প্রতিনিধি হওয়ায় মুখরোচক গুঞ্জন বইছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, মেধা নয় অর্থের বিনিময়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের পচ্ছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের কথা বলা হয়নি,যাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তার সনদ জাল। কারণ তিনি প্রাথমিকের গন্ডি পেরুতে পারেননি, তবে ৮ম শ্রেণী পাশের সনদ দিয়েছেন। এদিকে নিয়োগ বাণিজ্যের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অন্যদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ গত ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার স্থানীয়রা এই নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে ডাকযোগে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিভাবক মহলের ভাষ্য, সম্প্রতি অপ্রচলিত একটি আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এবং এদিনের পত্রিকার কপি উপজেলার কোথাও পাওয়া যায়নি, স্কুল কমিটি সব পত্রিকা নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন। ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পায়নি। যারা আবেদন করেছেন তারা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের অনুগত এবং ডামি প্রার্থী। নিরাপত্তাকর্মীর পদে ৮ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদে ৬ জন আবেদন করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে থমথমে পরিবেশে পুলিশ পাহারায় পাকড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুটি পদের বিপরীতে মোট ১৪ প্রার্থী আবেদন করেন। তবে এদিন মাত্র ৬ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এতে নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছে, এটা অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবেদনকারি জানান, আবেদন করার পর জানতে পারেন আগে থেকেই সব লেনদেন হয়ে গেছে। এমনকি দরদাম করে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। তাহলে লোক দেখানো পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লাভ কি। অপরজন বলেন, তাকে আবেদন করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক তিনি ডামি প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওই পদে ১৪ লাখ টাকায় প্রধান শিক্ষকের মনোনিত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান গত ১৯ আগষ্ট মঙ্গলবার রাতে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে যেই দুজন প্রার্থীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির আলোচনা হয়েছে। পরের দিন ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার কাকতালীয়ভাবে তারাই লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়াও ডিজির প্রতিনিধি ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মানে শিক্ষক-কর্মচারীর চাঁদার টাকায় স্কুলে রাজকীয় ভুরিভোজ আয়োজন করা হয়েছে। সরেজমিন অনুসন্ধান করলে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। স্থানীয়রা সরেজমিন তদন্তপুর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম এবং ডিজির প্রতিনিধি রাজশাহী গভঃ ল্যাবরেটরী স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, মধ্যাহ্ন ভোজ স্কুল করেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে পাকড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আকতার রেজা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিভাবে নিয়োগ হয় সেটা সবাই জানে। তারা শুধু উপরের নির্দেশ মতো কাজ করেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা স্কুলের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ রিপন বলেন, নিয়োগ কিভাবে হয় বা হবে সেটা কি সাংবাদিকদের জানাতে হবে, যেভাবে হবার সেভাবে হচ্ছে, আপনাদের খবর করার কাজ খবর করেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, তিনি এই নিয়োগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।