1. smsitservice007gmail.com : admin :
আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সাংকাচওড়া গ্রামে একটি পরিবারে সাতজন প্রতিবন্ধী। - সতেজ বার্তা ২৪
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
প্রাপ্ত কেন্দ্র 70 : আজমত উল্লা 29923, জায়েদা খাতুন 33397    ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ জুন

আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সাংকাচওড়া গ্রামে একটি পরিবারে সাতজন প্রতিবন্ধী।

মাজাহারুল ইসলাম মামুন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৪১ বার পঠিত

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সাংকাচওড়া গ্রামে একটি পরিবারে সাতজন প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে পাঁচজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, একজন মানসিক ও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছেন।
বর্তমানে পরিবারটিতে একমাত্র উপার্জনক্ষম বড় ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরন নবী (২৬)। তিনি গান গেয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করে থাকেন।
আর গান গাইতে দোতারাই তার একমাত্র সম্বল।
নুরন নবী ওই গ্রামের বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এন্তাজুল হকের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, জন্মলগ্ন থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এন্তাজুল হক। তার স্ত্রীর নাম নুরজাহান বেগম। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ, যে কারণের আগে তার সহায়তাতেই পরিচালিত হতো এন্তাজুলের সংসার। একপর্যায়ে সংসারে তাদের প্রথম সন্তান নুরন নবীর জন্ম হয়। কিন্তু সন্তানটি বাবার মতোই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়। এর দুই বছর পর দ্বিতীয় সন্তান নুর আলম (২৪) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। একইভাবে তৃতীয় সন্তান লিমন ইসলাম (২২) ও চতুর্থ সন্তান রেশমার (১৩) জন্ম নেয়। তারাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
এভাবেই পরিবারটিতে নতুন চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্ম হয়। বাবা-মাসহ পরিবারটির ছয়জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই দৃষ্টি শক্তিহীন। নুরজাহানই সংসারটির একমাত্র সুস্থ ও উপার্জনক্ষম ছিলেন। সর্বশেষ গত ৯ বছর আগে নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতির সংসারে সুস্থ সবল শিশু সেমন ইসলামের জন্ম হয়। তাদের সাতজনের পরিবারে পাঁচজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে বড় দুই ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে বিয়ে করতে কোনো সুস্থ মেয়ে রাজি না হওয়ায় একজনকে মানসিক ও একজনকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এনিয়ে তাদের পরিবারে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে। বড় দুই ছেলের ঘরে নাতি-নাতনি পেয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। তবে নাতি-নাতনিরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছে।
বর্তমানে এই সাতজন প্রতিবন্ধীর সংসার চলে দোতরা বাজিয়ে গান করা বড় ছেলে নুরন নবীর আয় দিয়ে। বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জে গান গেয়ে ও শারীরিক কসরত দেখিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সাতজন প্রতিবন্ধীর এই বড় সংসার। গানে আয় হলে পেটে ভাত জোটে, না হলে উপোষ থাকতে হয় তাদের। জীবনের অনেক রাত তাদের অভুক্ত কেটেছে। নুরজাহান অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দৃষ্টিহীন স্বামী ও চার সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিয়েছেন।
এক সময় বুঝতে শেখা বড় ছেলে নুরন নবীকে আরডিআরএস প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে কয়েক মাসের বেশি পড়া হয়নি নুরন নবীর। পড়াশোনা না হলেও দোতারা বাজানো শিখে নেন। পরবর্তীকালে নিজের প্রচেষ্টায় গান করা শুরু করেন। বয়সের ভারে নাজুক নুরজাহান ঝিয়ের কাজে অক্ষম হলে খাদ্য সংকটে পড়ে পরিবারটি। নিরুপায় নুরন নবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও সংসারের ঘানি টানতে নিজেই দোতারা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। লাঠির সাহায্যে ও ছোট যানবাহনের সাহায্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে দোতরা বাজিয়ে গান ও শারীরিক কসরত দেখান নুরন নবী। নিজের ও তার পরিবারে করুন চিত্র তুলে গান রচনাও করেছেন তিনি। তার গান শুনে খুশি হয়ে মানুষ যা দেয় তা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে চলে তাদের সংসার।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় তাদের সাতজন প্রতিবন্ধীর পাঁচজনই ভাতা পাচ্ছেন। প্রতি মাসে জনপ্রতি ৭০০ হারে পাওয়া টাকা এবং নুরন নবীর দোরাতার গানের আয়ে চলছে তাদের ১০ সদস্যের সংসার।
সাত প্রতিবন্ধীর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরন নবী বলেন, গান বাজনা করতে হাটে-বাজারে যেতে হয়। সেখানে একা যাওয়া এবং আসর জমানো কষ্টকর। প্রথমদিকে অন্যের সহায়তা নিতাম। কিন্তু যাকে সঙ্গে রাখি সে চুরি করে। তাই একাই চলি। গান গেয়ে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়ে চলছে এ সংসার। আমাকে স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করার পথ করে দিতে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছে অনুরোধ রইলো।
নুরন নবীর বাবা এন্তাজুল বলেন, প্রথম দিকে স্ত্রীর আয়ে আর পরে বড় ছেলের দোতারার গানে চলছে সংসার। সুস্থ কোনো ছেলে অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করে না। তাই দু’জন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলের শ্বশুর-শাশুড়িও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নান্নু বলেন, ওই পরিবারের পাঁচজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে সরকারিভাবে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। নুরন নবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলেও তার দোতারার সুর ও গান বেশ ভালো।
এ জাতীয় আরও খবর
Translate »