মাজাহারুল ইসলাম মামুন,
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
কয়েক দফায় তিস্তার কড়াল গ্রাসে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব ইসমাইলের ঠাঁই হয় খাস জমিতে। পুরাতন ছিদ্র টিনের উপর পলিথিন দিয়ে বানানো ছায়লা ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করলেও জুটেনি মুজিব বর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।
তিন সন্তান, বৃদ্ধা মা আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতে প্রধানমন্ত্রীর মুজিব বর্ষের ঘর পেতে তিন দফায় আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে। তবুও মেলেনি একটি ঘর কিংবা ভাঙ্গা ছেড়া ঘরটি মেরামতের ব্যবস্থা।
ভুমিহীন ইসমাইল হোসেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে।
ভুমিহীন ইসমাইল হোসেন ও তার প্রতিবেশীরা জানান, ৪ বছর আগে তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে অন্যদের মত ইসমাইলদের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। মাথা গোজার ঠাঁই করতে কাশিরাম গ্রামের খাস জমিতে এক ছায়লা টিনের একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরী করেন। সেখানে তিন সন্তান, বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পুরাতন টিনগুলো ছিদ্র হয়ে ঘরের ভিতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় টিনের উপর পলিথিন সাটিয়ে বৃষ্টি আর শীত নিবারনের ব্যবস্থা করেছেন।
দুর থেকে দেখলে ইসমাইলের ঘরটি গরু রাখার গোয়াল ঘর মনে হবে। সেই ঘরটিতে তিন সন্তান, বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সামান্য কয়েকটা পুরাতন খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা ঘরটি একটু ঝড়ো বাতাস হলেই দুমড়ে মুচরে যাবে। হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও। দিনভর অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যা মজুরী পান তা দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কাটে তাদের জীবন। তিন বেলা খাবার জুটানো যেখানে কষ্টের সেখানে পলিথিন সাঁটিয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়াই বড় আলিসান ঘর। অনেক চেষ্টা করেও ঘরটি সংস্কার করতে পারেননি। অভাব নামক দানবের কাছে বার বারই হেরে গেছেন ইসমাইল হোসেন।
লোকমুখে শুনে মুজিববর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে তিন তিনবার আবেদন করেছেন। যথাযথ ভাবে আবেদন করেও মেলেনি কাংখিত ঘর। কিংবা কেউ তার ভাঙ্গা ছেড়া ঘরটি মেরামতও করার সহায়তা করেন নি।
অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে ভূমিহীন ইসমাইল হোসেন বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনের সাথে কিছু বিত্তবানও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। অনেকে ঘর পেয়েও লোক লজ্বায় সরকারী ঘরে থাকছেন না। অথচ আমি তিন বার আবেদন করেও একটা ঘর জোটেনি। কেউ ঘরটি মোরামত করার ব্যবস্থাও করেন নি। কথায় আছে, “হতভাগ্য যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়”। সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাতে একটি ঘরের আকুতি জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। তবে ভূমিহীন এ পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।