বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা আজ শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলের কর্মসূচি সম্পন্ন করতে চান। যুগপৎ আন্দোলনের এই কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাজবন্দীদের মুক্তি এবং দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা করার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গণমিছিলের জন্য ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা সড়ক থেকে নাইটিঙ্গেল পর্যন্ত কে কোন জায়গায় থাকবেন, সেটি মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ ১৩টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মূল মঞ্চে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করব।’ এই কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ জনগণও ব্যাপকভাবে যোগদান করবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই গণমিছিল থেকে আগামী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির কাছাকাছি সময়ে ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত, এলডিপি এফডিসি-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মগবাজার হয়ে মালিবাগ পর্যন্ত মিছিল বের করবে। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করবে সাতদলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। এ ছাড়া দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা পৃথক মিছিল বের করবে বলে জানিয়েছে জামায়াত। দলটি গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা জাতীয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশ থেকে বেলা সাড়ে তিনটায় গণমিছিলের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর এক দফা অনলাইনে আবেদন করার পর গতকাল সকালে আবার লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন গোলাম রহমান, জালাল উদ্দিন ও সাইফুর রহমান। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং দলের আইনজীবী শাখার দায়িত্বে রয়েছেন।
গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গণমিছিল কর্মসূচির সমন্বয়কারী এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে মগবাজার পর্যন্ত গণমিছিল করার অনুমতি পেয়েছি। আমাদের গণমিছিল হবে শান্তিপূর্ণ।’
এ বিষয়ে গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করলে কোনো আপত্তি নেই। যদি বিএনপি ভাঙচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে, রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং রাস্তায় বসে অবরোধ করে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ করবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, গণমিছিলের সম্মুখে থাকবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। তাদের নাইটিঙ্গেল মোড়ে থাকতে বলা হয়েছে। মিছিলে মহিলা দলের পর থাকবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এরপর নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ঢাকা ব্যাংকের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, আনন্দ ভবনের সামনে কৃষক দল, হকস বে’র সামনে স্বেচ্ছাসেবক দল, ভিক্টরি হোটেলের সামনে পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা দল, কড়াই গোশত রেস্টুরেন্টের সামনে যুবদল, চায়না টাউন মার্কেটের সামনে ঢাকা জেলা বিএনপি, জোনাকি সিনেমা হলের সামনে শ্রমিক দল, পল্টন থানার বিপরীত পাশে মৎস্যজীবী দল, তাঁতি দল, ওলামা দল এবং জাসাস থাকবে। এ ছাড়া ফকিরাপুল থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কে থাকতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে। প্রতিটি স্থানের জন্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। জানা গেছে, বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং গণমিছিল-পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের উসকানি পরিহার করে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি সমাপ্ত করতে চাই।’
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ ও গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান।