বিএনপি ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচির দিনই ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। সা্রা দেশ থেকে দলের নেতা-কর্মীরা আসবেন। দলীয় সভানেত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বলে পুরো শহরেই থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে বিএনপি গণমিছিল করতে চাইলে শহরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও যদি দেশে গণতন্ত্র না এসে থাকে কিংবা সাম্প্রদায়িকতার অবসান না হয়ে থাকে, তার দায়ও সবাইকে নিতে হবে। জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও কেন সেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করল না? দলটির নেতারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেন। আবার তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে ধর্মভিত্তিক দলকেও সঙ্গী করতে দ্বিধা করে না। অতীতে যাঁরা দেশ শাসন করছেন এবং বর্তমানে যাঁরা শাসন করছেন, সবাই নিজ নিজ স্বার্থে ধর্মকে ও ধর্মীয় দলকে ব্যবহার করছেন। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু অষ্টম সংশোধনী রেখে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সংহত করার অঙ্গীকার করলেন, সেদিনের পত্রিকার দুটি খবর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একটি মাগুরার। অপরটি ফেনীর। মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘আমি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, মাগুরার যাঁদেরকে ১০ ডিসেম্বরের ওই সমাবেশ বা ওই পুরান ঢাকার সমাবেশে দেখা গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেব। এই মাগুরায় আমরা কোনো সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে এক ইঞ্চি জায়গা দেব না।’
এই হুঁশিয়ারি যদি তিনি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে করে দিতেন, তাহলে কিছু বলার থাকত না। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংসদ সদস্য মহোদয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেই পারেন। কিন্তু যদি বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী ঢাকার সমাবেশে গেছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলে থাকেন, তাহলে দেশের আইন ও সংবিধান বদলাতে হবে। সংবিধানে নতুন ধারা যুক্ত করতে হবে যে বিরোধী দলের কোনো সমাবেশে কেউ যোগ দিতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের অনুমতি নিতে হবে। অর্থাৎ এমপির অনুমতি ছাড়া সমাবেশে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয়।
সাইফুজ্জামান শিখরের এই বক্তব্য থেকে প্রশাসন কী বার্তা পাবে? সেখানকার ডিসি-এসপির সাধ্য আছে কি তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়ার? এটা কেবল মাগুরার চিত্র নয়। সারা দেশের।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন এ হামলার জন্য স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা করে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা হত্যার মিশনে নেমেছে। তারা জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত রেখেছে। প্রতিটি রক্তকণার বদলা নেওয়া হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
বিএনপির এই নেতার বক্তব্যে মনে হয়েছে, এবার তারাও মুখ বুজে মার খেতে রাজি নয়। দুই পক্ষই যদি দুই পক্ষকে মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসে দেশের অবস্থা কী হবে একবার ভাবুন।
অনেকেই ভেবেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে। দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা কমে আসবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণির নেতা-কর্মী উত্তেজনা জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চান।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দলীয় অফিসে পুলিশের অভিযান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি ১৩ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ ও ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি নিয়েছিল। ১৩ তারিখে ঢাকায় দলীয় অফিসের সামনের রাস্তাতেই সেই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। অথচ ৭ তারিখে বিএনপির অফিসের সামনে নেতা-কর্মীদের জমায়েতকে কেন্দ্র করে নানা অঘটন ঘটল। একজন মানুষ মারা গেলেন। দলীয় অফিসে অভিযান চলল। আইন চলে ক্ষমতাসীনদের মর্জিমাফিক।